.
আন্তর্জাতিক

হামলা হলেই ইরানের ভয়ংকর প্রতিশোধ! টার্গেটে ইসরায়েল ও মার্কিন ঘাঁটি?

Email :3

১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৩রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি রাত ৮:৪৬ রবিবার হেমন্তকাল

মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক আকাশে আবারও ঘনিয়েছে অবিশ্বাসের মেঘ। ২৯ অক্টোবর তারিখটিকে কেন্দ্র করে তেহরানের পক্ষ থেকে এক অদৃশ্য কিন্তু সুস্পষ্ট ‘রেড লাইন’ টেনে দেওয়া হয়েছে। ইরানের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে যদি দেশটির সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো আঘাত আসে, তবে তার জবাব হবে বিধ্বংসী এবং এর জন্য কোনো রাখঢাক করা হবে না। ইরানের দীর্ঘদিনের ‘কৌশলগত ধৈর্য’ নীতি মুহূর্তের মধ্যে একটি সর্বাত্মক সামরিক প্রতিক্রিয়ায় রূপ নিতে পারে।

এই উত্তেজনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ইরানের কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায় থেকে একযোগে যে বার্তা আসছে, তা অত্যন্ত স্পষ্ট। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ২০২৫ সালের জুলাই মাসে একটি ১২ দিনের সংঘাতের পর যে কঠোর অবস্থানের কথা বলেছিলেন, তা আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সে সময় তিনি বলেছিলেন, পরবর্তী যেকোনো আগ্রাসনের জবাব হবে “আরও কঠোর এবং যা লুকানো অসম্ভব।” সেই বক্তব্যেরই সামরিক প্রতিধ্বনি শোনা গেছে ইরানের সেনাবাহিনীর ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর অ্যাডমিরাল হাবিবোল্লাহ সাইয়ারির কণ্ঠে। তিনি সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন, দেশের সশস্ত্র বাহিনী—স্থল, নৌ এবং বিমান—সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত এবং যেকোনো আগ্রাসনকে নস্যাৎ করতে কয়েক মুহূর্তের বেশি সময় নেবে না। ইরানের সেনা নেতৃত্বের দাবি, অতীতের সংঘাত থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা তাদের সামরিক সক্ষমতা এবং লজিস্টিক নেটওয়ার্ককে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

তেহরানের এই অনড় অবস্থানের পেছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান। সম্প্রতি ইসরায়েলের লেবাননে চালানো বিমান হামলাকে ইরান নিজেদের নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছে। লেবাননের হিজবুল্লাহকে তেহরান তার “প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর” বা কৌশলগত বাফার জোন মনে করে। তাই সেখানে কোনো বড় ধরনের ক্ষতিকে তারা নিজেদের উঠোনে আগুন লাগার শামিল বলে গণ্য করছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পারমাণবিক চুক্তির “স্ন্যাপব্যাক” নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপের চাপ। এই দ্বিমুখী চাপের মুখে ইরান নিজেদের কোণঠাসা অনুভব করছে এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার (zero tolerance) নীতি গ্রহণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

যদি শেষ পর্যন্ত হামলা হয়, তবে ইরানের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে তার একটি রূপরেখা পাওয়া যাচ্ছে:

১. তাৎক্ষণিক ও বহুস্তরীয় হামলা: ইরান কেবল ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন ব্যবহার করেই থামবে না। বরং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সমন্বিত ও বহুস্তরীয় সামরিক জবাব দেবে, যা প্রতিপক্ষের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

২. লক্ষ্যবস্তুর বিস্তার: শুধু ইসরায়েল নয়, এই অঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোও ইরানের পাল্টা হামলার একটি সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। এর মাধ্যমে ইরান সংঘাতের ব্যয় শুধু ইসরায়েলের জন্য সীমাবদ্ধ না রেখে এর সহযোগীদের ওপরও চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।

৩. কূটনৈতিক যুদ্ধ: সামরিক পদক্ষেপের পাশাপাশি ইরান আন্তর্জাতিক মঞ্চে, বিশেষ করে জাতিসংঘে, ইসরায়েলকে একটি “আগ্রাসনকারী রাষ্ট্র” হিসেবে তুলে ধরতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে। এর মাধ্যমে তারা বিশ্ব জনমতকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা চালাবে।

বর্তমানে তেহরান একদিকে যেমন কূটনৈতিক চ্যানেলে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছে, তেমনি সামরিকভাবে নিজেদের fully prepared রেখেছে। সুতরাং, আগামী দিনগুলো নির্ধারণ করে দেবে মধ্যপ্রাচ্য কি আরেকটি বিধ্বংসী সংঘাতের দিকে এগোবে, নাকি কূটনৈতিক বিচক্ষণতা শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—২৯ অক্টোবরের পর এই অঞ্চলের পরিস্থিতি আর আগের মতো নাও থাকতে পারে।

Analysis | Habibur Rahman

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts