১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৩রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি রাত ৯:০৬ রবিবার হেমন্তকাল
দীর্ঘদিনের বিশৃঙ্খলা আর ভোগান্তির পর অবশেষে সিলেট মহানগরীর গণপরিবহন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের সুর বেজে উঠেছে। কেবল নতুন সেবা চালুই নয়, বরং পুরো ব্যবস্থাকে একটি কাঠামোর মধ্যে এনে নগরবাসীর দৈনন্দিন যাত্রাকে মসৃণ করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ । এই উদ্যোগকে দেখা হচ্ছে পরিবহন ব্যবস্থার বিপরীতে একটি সুচিন্তিত ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে।
সিলেটের পরিচিত দৃশ্য—অফিসগামী মানুষের ভিড়, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি আর সড়কের মোড়ে মোড়ে অনিয়ন্ত্রিত সিএনজি-লেগুনার জটলা। এই চিত্র বদলে দিতে এবার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি ঘোষিত হয়েছে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অধীনে নিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশা ও লেগুনার জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রথম ধাপ।

এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য কেবল যানজট কমানো নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে একটি বহুমুখী পরিকল্পনা। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের লক্ষ্য, অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য বন্ধ করে একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য যাতায়াত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। যখন প্রতিটি অনুমোদিত গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড ও রুট থাকবে, তখন যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানোর প্রবণতা যেমন কমবে, তেমনি যাত্রীদেরও অতিরিক্ত ভাড়ার বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। ভাড়ার হার নির্ধারণের কাজটিও দ্রুত সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ, যা এই ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনবে।
পরিবহন ব্যবস্থাকে আধুনিক করার অংশ হিসেবে যাত্রী নিরাপত্তাকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নগরীর অভ্যন্তরে সিএনজি অটোরিকশায় চালক ব্যতীত তিনজন যাত্রী পরিবহনের নিয়ম কার্যকর করার ঘোষণা সেই ইঙ্গিতই দেয়। যদিও এর তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে এই নিয়ম বাস্তবায়িত হলে যাত্রীরা আরও আরামদায়ক ও নিরাপদ সেবা পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এটি অবশ্য সিলেটে গণপরিবহন চালুর প্রথম প্রচেষ্টা নয়। ২০১৯ সালে “নগর এক্সপ্রেস” বাস সার্ভিস চালু হলেও নানা কারণে তা পুরোপুরি সফল হতে পারেনি। তবে এবারের উদ্যোগটি অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও বড় এবং সমন্বিত পরিসরে সাজানো হচ্ছে। এটিকে শুধু একটি বাস সার্ভিস হিসেবে না দেখে, বরং সিএনজি, লেগুনা এবং সম্ভাব্য বাস নেটওয়ার্ককে একই ছাতার নিচে এনে একটি পূর্ণাঙ্গ গণপরিবহন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
সব মিলিয়ে, এই পদক্ষেপটি কেবল কিছু গাড়ি রাস্তায় নামানোর ঘোষণা নয়; এটি বিশৃঙ্খল একটি ব্যবস্থাকে নিয়মের বেড়াজালে এনে একটি স্মার্ট ও বাসযোগ্য নগরী গড়ার পথে সিলেট সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দৃঢ় প্রত্যয়। এখন দেখার বিষয়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর সিলেটের রাজপথ কতটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
Analysis | Habibur Rahman








