.
অন্যান্য

বিচারিক রায় প্রত্যাখ্যান? নিজামী-সাকার ফাঁসি নিয়ে ফখরুলের মন্তব্যে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ

Email :3

১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৩রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি রাত ৩:৪৫ রবিবার হেমন্তকাল

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন বিতর্কের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত মীমাংসিত এবং বহুল আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে ‘মিথ্যা’ ও ‘কলঙ্কজনক’ আখ্যা দিয়ে তিনি মূলত বিচারিক রায়কেই প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত দিলেন। তার এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা নিছক অতীতচারিতা হিসেবে দেখছেন না, বরং এটিকে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেই বিশ্লেষণ করছেন।
দৈনিক নয়া দিগন্ত-এর ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মির্জা ফখরুল এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেন। তিনি বলেন, “জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো ব্যক্তিদের সম্পূর্ণ বানোয়াট মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এটি শুধু কিছু ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড নয়, এটি আমাদের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়।”

ফখরুলের এই বক্তব্য কেবল অতীতের বিচার প্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তিনি বর্তমান সরকারের শাসনকে ‘ফ্যাসিবাদী’ আখ্যা দিয়ে গণতন্ত্রকামী শক্তির ওপর চলমান দমন-পীড়নের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি অভিযোগ করেন, “এই সরকারের আমলে লাখ লাখ মানুষকে মিথ্যা মামলার জালে বন্দি করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা ও গুমের শিকার হতে হয়েছে, যার কোনো বিচার হয়নি। জাতি এই দুঃশাসনের কথা ভুলে যায়নি।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ফখরুলের এই মন্তব্য কোনো রাজনৈতিক বিবৃতি নয়। এর মাধ্যমে বিএনপি একদিকে যেমন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক রায়কে সরাসরি প্রত্যাখ্যানের বার্তা দিলো, তেমনি ‘আলেম-ওলামা’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে দলের ধর্মভিত্তিক সমর্থক গোষ্ঠীকে নতুন করে চাঙ্গা করার একটি কৌশল গ্রহণ করেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত দ্বারা মীমাংসিত একটি বিষয়কে পুনরায় সামনে এনে তিনি মূলত সরকারের বৈধতার ভিত্তিমূলে আঘাত হানতে চেয়েছেন, যা দলটির ভবিষ্যৎ আন্দোলনের জন্য একটি মনস্তাত্ত্বিক ক্ষেত্র প্রস্তুতের চেষ্টা হতে পারে।


বক্তব্যের শেষে মির্জা ফখরুল জনগণের ইচ্ছায় পরিচালিত একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে, সেই গণতান্ত্রিক যাত্রার আহ্বানের আগে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে তার এই গুরুতর প্রশ্ন, আগামী দিনে রাজনীতির মাঠকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তার এই বক্তব্য কি কেবলই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা, নাকি দেশের বিচারিক ইতিহাসের একটি অধ্যায়কে নতুন করে পর্যালোচনার দাবি—সেই বিতর্ক এখন থেকেই শুরু হলো।

Analysis | Habibur Rahman

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts