১১ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৪ঠা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি রাত ১২:২৬ সোমবার হেমন্তকাল
অর্থছাড় আছে, প্রকল্প আছে, কিন্তু নেই বাস্তবায়ন। উন্নয়নের চাকা ঘুরানোর বদলে, অর্থবছরের প্রথম তিন মাস প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ সিন্দুকে বন্দী করে রাখল সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এই অবিশ্বাস্য স্থবিরতা কেবল উন্নয়ন কার্যক্রমকেই বাধাগ্রস্ত করছে না, বরং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতাকেও দাঁড় করিয়েছে কঠোর প্রশ্নের মুখে।
তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। দেশের স্বাস্থ্য খাতের আধুনিকায়নের জন্য তাদের ১৪টি প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৪ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। কিন্তু জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে তাদের খরচের খাতা পুরোপুরি সাদা। একটি টাকাও মাঠ পর্যায়ে যায়নি। একই পথে হেঁটেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যারা ৪টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ১২১ কোটি টাকা থেকে কিছুই খরচ করতে পারেনি। এমনকি সংসদ বিষয়ক সচিবালয়ের মতো ছোট একটি প্রতিষ্ঠানও তাদের ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ অব্যবহৃত রেখেছে।
এই হতাশাজনক চিত্র উঠে এসেছে খোদ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে। বিষয়টি কেবল এই তিন মন্ত্রণালয়েই সীমাবদ্ধ নয়। সার্বিকভাবেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতি কচ্ছপের চেয়েও ধীর। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সামগ্রিক এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫.০৯ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১,৫৭০ কোটি টাকা কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি நிதி সংকটের চেয়েও প্রশাসনিক অদক্ষতা ও গাফিলতির এক হতাশাজনক নজির। বিশাল অংকের এডিপি বাজেট (২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা) ঘোষণা করা হলেও, অর্থবছরের শুরু থেকেই বাস্তবায়নে এই হোঁচট পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রাকেই হুমকির মুখে ফেলে দেয়। বিশেষ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের এই স্থবিরতা দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নয়নে সরাসরি আঘাত হানছে, যেখানে প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ।
বড় আকারের বাজেট প্রণয়ন করলেই যে উন্নয়ন নিশ্চিত হয় না, এই পরিসংখ্যান তারই প্রমাণ। এখন প্রশ্ন হলো, কেন প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও অর্থ ব্যয়ে این অনীহা বা ব্যর্থতা? এই স্থবিরতার জন্য দায়ী কারা এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে কি না—সেই উত্তরই এখন খুঁজছে দেশের সাধারণ মানুষ ।
Analysis | Habibur Rahman







