.
অফবিট

সিলেটের রাজপথে স্বস্তির নিশ্বাস, পুনর্বাসনের মাঠে জীবিকার প্রশ্ন: বাস্তবতার দুই পিঠ

Email :28

সিলেটের রাজপথে স্বস্তির নিশ্বাস, পুনর্বাসনের মাঠে জীবিকার প্রশ্ন: বাস্তবতার দুই পিঠ

একই নগরীতে যেন দুই ভিন্ন বাস্তবতা। একদিকে জিন্দা বাজার আর বন্দর এলাকার প্রশস্ত, যানজটমুক্ত রাস্তায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে নগরবাসী, অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ দেওয়া নতুন মাঠে নিজেদের ভাগ্য নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন উচ্ছেদ হওয়া কয়েকশ হকার। জেলা প্রশাসনের এক কঠোর নির্দেশনায় সিলেটের চেহারা বদলে গেলেও এই বদলের আড়ালে তৈরি হয়েছে এক নতুন বিতর্ক, যা জীবিকা এবং নগর শৃঙ্খলার চিরন্তন দ্বন্দ্বকে আবারও সামনে এনেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, যে বন্দর বাজার একসময় অবৈধ দোকান আর মানুষের ভিড়ে স্থবির থাকতো, সেখানে এখন যানবাহন চলছে নির্বিঘ্নে। ফুটপাত ধরে স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটছেন পথচারীরা। স্থানীয় স্থায়ী দোকান মালিকদের মুখেও ফুটেছে হাসি। এমনই একজন কাপড় ব্যবসায়ী, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আগে আমাদের দোকানের সামনে হকারদের চেঁচামেচি আর ভিড়ের কারণে ক্রেতারা ঢুকতেই পারতেন না। এখন রাস্তা পরিষ্কার হওয়ায় আমাদের বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।”

জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে নগর পরিকল্পনার একটি সফল ধাপ হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে। যানজট নিরসনের পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্যবর্ধনেও এটি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

কিন্তু এই উজ্জ্বল ছবির অপর পিঠেই রয়েছে গভীর অন্ধকার। সিটি কর্পোরেশনের পেছনে বিশাল মাঠে পুনর্বাসিত হওয়া হকারদের অনেকের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। এমনই একজন ফল বিক্রেতা, পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল করিম, ছলছল চোখে বলেন, “বাবা, রাস্তার মোড়ে দিনে তিন-চার হাজার টাকার ফল বেচতাম। এখানে সারাদিনে হাজার টাকাও হয় না। মানুষ এদিকে কম আসে। এই টাকা দিয়ে সংসার চালাবো ক্যামনে? আমরা কি আবার রাস্তায় বসতে পারবো না?” তাদের দাবি, নতুন জায়গায় ক্রেতার আনাগোনা নেই বললেই চলে এবং তাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারা আবারও পুরনো জায়গায় ফিরে যাওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন। তবে এই কান্নার গল্পের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এক ভিন্ন চিত্র। সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত নতুন হকার্স মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ক্রেতাদের আনাগোনা মোটেও কম নয়। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যথেষ্ট ভিড় এবং কেনাবেচার ব্যস্ততা চোখে পড়ে। অনেক ক্রেতাই নতুন এই খোলামেলা পরিবেশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ফলে জন্ম নিয়েছে নতুন এক বিতর্ক। হকারদের এই আহাজারি কি আসলেই জীবিকা হারানোর হাহাকার, নাকি আরও বেশি লাভের আশায় নগরীর প্রধান সড়কের অবৈধ স্থান ফিরে পাওয়ার কৌশল? সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা তাদের একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা করছি। একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগবেই। কিন্তু শুরুতেই হতাশ হয়ে পুরনো বিশৃঙ্খলায় ফিরে যাওয়ার দাবি অযৌক্তিক।”

দিনশেষে, একদিকে একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল নগরীর স্বপ্ন, অন্যদিকে কয়েকশ মানুষের জীবিকার জটিল প্রশ্ন। প্রশাসনকে এখন এই দুই বাস্তবতার মধ্যে একটি টেকসই ভারসাম্য খুঁজে বের করার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এই উদ্যোগের চূড়ান্ত সাফল্য নির্ভর করছে নগরীর শৃঙ্খলা রক্ষা এবং হকারদের জন্য একটি সম্মানজনক ও লাভজনক জীবিকার পথ নিশ্চিত করার ওপর।

Analysis | Habibur Rahman

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts