১১ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ২৭শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৪ঠা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি রাত ৩:৩৭ সোমবার হেমন্তকাল
লাখ লাখ তরুণের স্বপ্ন বোনার কারিগর বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) যেন এক অসহায় রাজা। সিংহাসন আছে, কিন্তু ক্ষমতা প্রয়োগের স্বাধীনতা নেই। আন্তরিকতার কোনো অভাব না থাকলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক অচলায়তন এবং ক্ষমতার অদৃশ্য শেকলে বাঁধা পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি আনার সদিচ্ছা থাকলেও বাস্তবে তা হোঁচট খাচ্ছে বারবার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পিএসসির এই জিম্মিদশার মূলে রয়েছে দুটি প্রধান কারণ—আর্থিক ও ফাংশনাল পরাধীনতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসনাত বলেন, “পিএসসিকে কাগজে-কলমে স্বায়ত্তশাসিত বলা হলেও, প্রতিটি আর্থিক সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এটি অনেকটা পাইলটের আসনে বসেও কন্ট্রোল টাওয়ারের অনুমতি ছাড়া বিমান চালাতে না পারার মতো।”
সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগটি উঠেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধেই। বলা হচ্ছে, এই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় চাকরিপ্রার্থীরা নেই বললেই চলে। অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বা ‘গুন্ডামি’ এতটাই প্রবল যে, সেখানে আধুনিক ও যুগোপযোগী সংস্কারের কোনো উদ্যোগ টিকতে পারছে না। ফলে পুরোনো ও জটিল চাকরি বিধিমালা সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা এই মন্ত্রণালয়েরই দায়িত্ব, তা ফাইলচাপা পড়ে থাকছে বছরের পর বছর।
হাসনাত আরও যোগ করেন, “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যদি নীতিগত সহায়তা ও সমন্বয় না করে, তবে পিএসসির একার পক্ষে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা অসম্ভব। পুরো সিস্টেমটাই এমনভাবে তৈরি, যেখানে একটি প্রতিষ্ঠান এগোতে চাইলেও অন্য প্রতিষ্ঠান তাকে টেনে ধরে।”
এই চতুর্মুখী সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আশার আলো দেখানোর চেষ্টা করছে পিএসসি। সম্প্রতি তারা মাত্র এক বছরের মধ্যে বিসিএসের মতো বিশাল এক যজ্ঞ সম্পন্ন করার জন্য একটি সুপারিশমালা তৈরি করেছে। তবে হাসনাতরা প্রশ্ন তুলছেন, যে প্রতিষ্ঠানের নিজেরই হাত-পা বাঁধা, সে কীভাবে দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়ার স্বপ্ন দেখছে?
তাদের মতে, পিএসসির এই সুপারিশকে সফল করতে হলে আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংস্কার জরুরি। মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতাচর্চার বৃত্ত ভেঙে চাকরিপ্রার্থীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব না দিলে পিএসসির আন্তরিকতা কেবল একটি দীর্ঘশ্বাস হয়েই থাকবে, লাখো বেকারের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। এখন দেখার বিষয়, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এই অচলায়তন ভাঙার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় কি না।
Analysis | Habibur Rahman








