.
গোলাপগঞ্জ

সিলেটের গোলাপগঞ্জে স্বামীর হাতে স্ত্রী খু/ন!

Email :114

শনিবারের সকালটা আর দশটা দিনের মতোই শুরু হয়েছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে। কিন্তু ভোরের স্নিগ্ধতা মিলিয়ে যাওয়ার আগেই এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড সেই নিস্তব্ধতাকে চুরমার করে দেয়। নিজ ঘরে, সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে, স্বামী রেজাউল করিমের হাতে নির্মমভাবে খুন হন ২৩ বছর বয়সী সাহিদা বেগম। এই ঘটনাটি শুধু একটি অপরাধের পরিসংখ্যান নয়, এটি পারিবারিক সহিংসতার সেই বিষাক্ত রূপ, যা নীরবে আমাদের সমাজের গভীরে ছড়িয়ে পড়ছে এবং কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য প্রাণ।

ঘটনার নির্মম বিবরণ:
গোলাপগঞ্জ মডেল থানা সূত্রে জানা যায়, আজ শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে সাহিদা বেগমকে তার স্বামী রেজাউল করিম হত্যা করে। পারিবারিক কলহের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রতিবেশীরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা সাহিদার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল প্রতিবেদনের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। পুলিশের বিচক্ষণতায় ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত স্বামী রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শুধু একটি মৃত্যু নয়, একটি সতর্কবার্তাও:
সাহিদার এই মর্মান্তিক পরিণতি আমাদের সমাজের জন্য একটি ভয়াবহ সতর্কবার্তা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক সহিংসতা প্রায়শই একটি “পারিবারিক বিষয়” হিসেবে ধামাচাপা দেওয়া হয়, যা অপরাধীকে আরও বেপরোয়া করে তোলে। যখন একজন নারী তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষের দ্বারাই হত্যার শিকার হন, তখন প্রশ্ন ওঠে আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং семейных মূল্যবোধ নিয়ে।

সিলেট নগরীর গোলাপগঞ্জে স্বামীর হাতে স্ত্রী খু*ন।

বিপদ সংকেত দেখলে আপনার করণীয় কী?
এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য নাগরিক সচেতনতা এবং সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। আপনার আশেপাশে বা নিজের জীবনে এমন কোনো বিপদের আঁচ পেলে চুপ করে থাকবেন না।

  • তাৎক্ষণিক সহায়তা: যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে নিজের বা অন্যের জীবন বাঁচাতে দ্বিধা না করে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করুন।
  • নারী ও শিশুর সুরক্ষা: নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের জন্য সরকারের বিশেষ হেল্পলাইন ১০৯ নম্বরে ২৪ ঘণ্টা সহায়তা পাওয়া যায়।
  • আইনি পরামর্শ: আপনি যদি আইনি পদক্ষেপ নিতে চান কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন তা না জানেন, তবে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার হেল্পলাইন ১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করে বিনামূল্যে পরামর্শ নিতে পারেন।
  • মানসিক স্বস্তি: এমন ঘটনার সাক্ষী হওয়া বা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য হওয়াটা মানসিক ভাবে প্রচণ্ড পীড়াদায়ক। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সরকারি স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ নম্বরে যোগাযোগ করেপরামর্শ নেওয়া সম্ভব।

আইনের চোখে এই অপরাধ:
বাংলাদেশে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)’ এবং ‘দণ্ডবিধি’ অনুযায়ী, হত্যার মতো অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এই মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কিছু বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

  • সঠিক প্রমাণ: প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, পারিপার্শ্বিক আলামত, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং ডিজিটাল প্রমাণ (যেমন: পুরনো হুমকির মেসেজ বা কল রেকর্ড) মামলাকে শক্তিশালী করে।
  • দ্রুত বিচার: বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা অনেক সময় ভুক্তভোগীর পরিবারকে হতাশ করে তোলে। তাই এই ধরনের স্পর্শকাতর মামলার বিচার দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts