.
অন্যান্য

পরিবহন সিন্ডিকেটের পতন শুরু? চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স!

Email :3

১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৩রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি রাত ২:১১ রবিবার হেমন্তকাল

পরিবহন খাতের লাগামহীন চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে এবার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এসেছে কঠোর বার্তা। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে এবং সাধারণ মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে এই পদক্ষেপকে দেখা হচ্ছে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে। তবে দেশজুড়ে এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আশার পাশাপাশি রয়েছে গভীর শঙ্কা—অভিযানের ফলে চাঁদাবাজি কি আসলেই বন্ধ হবে, নাকি শুধু নিয়ন্ত্রণের হাতবদল ঘটবে?

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পণ্য পরিবহন এবং গণপরিবহনে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স” বা শূন্য সহনশীলতা প্রদর্শনের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা পরিবহন খাতে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই নির্দেশনার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আঞ্চলিক পর্যায়েও। টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন টার্মিনাল ও মহাসড়কে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। পরিবহন মালিক সমিতিগুলোও সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এই অদৃশ্য ‘করের’ বোঝায় তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

তবে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহন মালিকের মতে, অতীতেও এমন অভিযান অনেকবার দেখা গেছে। প্রতিটি বড় অভিযানের পর কিছুদিন চাঁদাবাজি বন্ধ থাকলেও কিছুদিন পর আবারও পুরনো চিত্র ফিরে আসে। তাদের সবচেয়ে বড় শঙ্কার কারণ হলো, প্রভাবশালী পুরোনো চক্র নিষ্ক্রিয় হলে সেই শূন্যস্থান পূরণে নতুন কোনো গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে চাঁদাবাজির মাত্রা না কমে, কেবল আদায়কারীর মুখ পরিবর্তন হয়। এতে তাদের ভোগান্তির কোনো স্থায়ী সমাধান হয় না, বরং নতুন চক্রের সঙ্গে নতুন করে ‘সমঝোতা’ করতে গিয়ে হয়রানি আরও বাড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাঁদাবাজির এই চক্র কেবল টার্মিনাল বা সড়কের কয়েকজন সন্ত্রাসীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর শেকড় অনেক গভীরে বিস্তৃত। তাই বিচ্ছিন্ন অভিযান চালিয়ে এর মূলোৎপাটন প্রায় অসম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত ও টেকসই নজরদারি ব্যবস্থা, যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি যানবাহনের চলাচল ও খরচের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে আইনের আওতায় আনা না গেলে সরকারের এই মহৎ উদ্যোগও শেষ পর্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

সর্বোপরি, সরকারের এই কঠোর মনোভাব সাধারণ মানুষ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। এখন দেখার বিষয়, এই নির্দেশনা কি শুধুই সাময়িক তৎপরতায় সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি দেশের অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ খাতের দীর্ঘদিনের বিষফোঁড়া উপড়ে ফেলতে একটি টেকসই সমাধানের পথে হাঁটবে রাষ্ট্র। এই পদক্ষেপের সফলতার ওপরই নির্ভর করছে সাধারণ মানুষের নিরাপদ যাতায়াত এবং বাজার স্থিতিশীলতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো।

Analysis | Habibur Rahman

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts