১২ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ২৮শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৫ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি রাত ৪:২০ মঙ্গলবার হেমন্তকাল
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মঞ্চে এক অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারণা হলো, যেখানে দুই ভিন্ন মেরুর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এক টেবিলে বসে সমাধান খুঁজছেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা এবং আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর अब ব্রাজিল-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে। এই চুক্তি সম্পন্ন হলে তা কেবল দুটি দেশের জন্যই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আসিয়ান সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অপ্রত্যাশিতভাবে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা এবং মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর মধ্যে। বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট লুলা ঘোষণা দেন যে, বহুল আলোচিত Brazil-US Trade Deal এখন চূড়ান্ত হতে মাত্র কয়েক দিন বাকি।
এই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল আমেরিকার শুল্ক প্রসঙ্গ। গত জুলাই মাসে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর কারাবাসের প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকা ব্রাজিলের পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই শাস্তিমূলক শুল্ক এক ধরনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা হিসেবে কাজ করছিল, যা ব্রাজিলের অর্থনীতি-র উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছিল। এই অচলাবস্থা কাটাতেই এই লুলা-ট্রাম্প বৈঠক ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিস্ময়করভাবে, দুই নেতার মধ্যকার আলোচনা ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ। লুলা জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে খুব শীঘ্রই একটি সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। দুই পক্ষই তাদের নিজ নিজ দলকে শুল্ক এবং নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের জন্য আলোচনার টেবিলে বসার নির্দেশ দিয়েছে।
এই Lula Trump Meeting-এ প্রেসিডেন্ট লুলা একটি মোক্ষম চাল দিয়েছেন। তিনি ট্রাম্পের কাছে একটি নথি উপস্থাপন করেন, যেখানে দেখানো হয় যে, আমেরিকার আরোপিত শুল্ক ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে ছিল। লুলা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে তুলে ধরেন যে, গত ১৫ বছরে ব্রাজিল নয়, বরং আমেরিকাই ব্রাজিলের সাথে বাণিজ্যে ৪১০ বিলিয়ন ডলার লাভ করেছে। এই তথ্যটি ট্রাম্পকে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যদি এই ব্রাজিল-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি সফলভাবে স্বাক্ষরিত হয়, তবে এটি দুই দেশের মধ্যে तनावপূর্ণ সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এটি প্রমাণ করবে যে, রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও অর্থনৈতিক স্বার্থে দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করতে পারে, যা বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-এর জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা দেবে। সব মিলিয়ে, এই চুক্তি এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
Analysis | Habibur Rahman








