.
বাংলাদেশ

জুলাইয়ের স্মৃতি রক্ষায় সিলেটের নতুন অভিভাবক: শহীদ পরিবারকে বুকে টেনে নিলেন ডিসি সারওয়ার আলম।

Email :49

সিলেটের প্রশাসনিক অঙ্গনে যোগ দিয়েই এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলম। ভেজালবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে দেশজুড়ে পরিচিতি পাওয়া এই কর্মকর্তা এবার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের অভিভাবক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। নিছক আনুষ্ঠানিকতায় আটকে না থেকে তিনি সরাসরি মাঠে নেমে ছুঁয়ে দেখছেন সেইসব পরিবারের ক্ষত, যারা স্বজন হারিয়ে বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

গত ২১ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর এক সপ্তাহও পার হতে দেননি সারওয়ার আলম। ছুটে গিয়েছেন বিয়ানীবাজারে, যেখানে জুলাইয়ের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে ঝরে গিয়েছিল কয়েকটি তাজা প্রাণ। শহীদ সুহেল, তারেক, ময়নুল এবং সাংবাদিক এটিএম তুরাবের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি কেবল দোয়া পাঠ করেই দায়িত্ব সারেননি, বরং শহীদদের পরিবারের পাশে বসে তাদের কথা শুনেছেন। সেখানে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “এই শহীদদের কাছে আমরা ঋণী। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া মুক্ত পরিবেশের মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।”

তাঁর এই উদ্যোগ কেবল দেশের মাটিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। গত ৩ সেপ্টেম্বর তিনি তার কার্যালয়ে ডেকে নেন সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফেরা সনদপ্রাপ্ত জুলাইযোদ্ধাদের। প্রবাসের মাটিতে থেকেও দেশের জন্য যারা লড়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির প্রাণ। দেশের ক্রান্তিকালে আপনাদের সেই আত্মত্যাগ জাতি কখনো ভুলবে না।”

ডিসি সারওয়ার আলমের এই তৎপরতা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন জুলাইয়ের স্মৃতি কিছুটা ধূসর হতে শুরু করেছিল। সিলেট জেলায় মোট ১৬ জন শহীদের মধ্যে কেবল গোলাপগঞ্জেই প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন। ৪ ও ৫ আগস্টের সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা মনে করে অনেক পরিবার এখনো আঁতকে ওঠে। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন আন্তরিক উদ্যোগ তাই শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের মনে নতুন করে জাগিয়েছে।

এটি কেবল একটি মতবিনিময় সভা নয়, বরং জুলাইয়ের চেতনাকে সমুন্নত রাখার এবং রাষ্ট্র যে তাদের ভোলেনি, সেই জোরালো বার্তা দেওয়ার একটি প্রয়াস। সারওয়ার আলমের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে, একজন প্রশাসক চাইলে কেবল আইনের রক্ষক নন, জনগণের আবেগেরও রক্ষক হতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts