.
অন্যান্য

কারা সেই প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তি? এদের না সরালে কি নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না?

Email :1

১০ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৩রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি রাত ২:০৫ রবিবার হেমন্তকাল

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন উত্তাপ বাড়ছে, তখন একটি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ‘পূর্বশর্ত’ হিসেবে নতুন এক দাবি সামনে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এই দাবিটি কোনো নতুন সংলাপ বা আইন প্রণয়নের নয়, বরং বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামোর ভেতরেই একটি শুদ্ধি অভিযানের। দলটির মতে, নির্বাচনের আগে মাঠকে সবার জন্য সমান করতে হলে অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালনকারী সরকারের ভেতর থেকে সেইসব ব্যক্তিকে সরিয়ে দিতে হবে, যাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে বা রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন রয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বিএনপির এই দাবিকে সরকারের জন্য একটি ‘লিটমাস টেস্ট’ হিসেবে দেখছেন। সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই বিষয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি स्पष्ट করেছেন যে, যেহেতু নতুন কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সাংবিধানিক সুযোগ নেই, সেহেতু বর্তমান সরকারকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু এই भूमिका তখনই অর্থবহ হবে, যখন সরকার নিজের ভেতর থেকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের অপসারণ করে নিজের নিরপেক্ষতার প্রমাণ দেবে।

আমির খসরুর বক্তব্যের গভীরে গেলে বোঝা যায়, এটি কেবল কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি বা সরিয়ে দেওয়ার মামুলি দাবি নয়। এর মাধ্যমে বিএনপি মূলত নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক নিরপেক্ষতার একটি স্পষ্ট মানদণ্ড ঠিক করে দিতে চাইছে। তাদের যুক্তি হলো, যেসব কর্মকর্তা অতীতে রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন বা যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তারা স্বপদে বহাল থাকলে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। এটি ভোটারদের মনে যেমন সংশয় তৈরি করবে, তেমনি পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকেই একটি বিতর্কের মুখে ঠেলে দেবে, যা একটি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে বড় অন্তরায় হতে পারে।

দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য শুধু সুন্দর সুন্দর কথা বা প্রতিশ্রুতিই যথেষ্ট নয়, বরং দৃশ্যমান পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। আর সেই আস্থা অর্জনের প্রথম ধাপই হলো প্রশাসনকে যেকোনো ধরনের প্রভাবমুক্ত রাখা। তাদের মতে, কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তির দায় পুরো সরকার বা রাষ্ট্র নিতে পারে না। তাই নির্বাচনের আগেই এই “প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিদের” অপসারণ করা হলে তা সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং রাজনৈতিক সংকট নিরসনে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে পারে।


মূলত, এই দাবির মাধ্যমে বিএনপি নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের দর-কষাকষির অবস্থানকে আরও শক্ত করলো। এটি সরকারের উপর এক ধরনের কৌশলগত চাপ, যা সরকারকে তার নিরপেক্ষতা প্রমাণে বাধ্য করবে। এখন বল সরকারের কোর্টে। সরকার যদি এই দাবিতে সাড়া দিয়ে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে তা বিরোধী দলগুলোর সাথে আস্থার সম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক হতে পারে। আর যদি এই দাবিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়, তবে আগামী দিনে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

দিনশেষে, এই দাবিটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর ফলাফলই হয়তো নির্ধারণ করে দেবে, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের পথ কতটা মসৃণ বা কণ্টকাকীর্ণ হবে।

Analysis | Habibur Rahman

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts