.
আন্তর্জাতিক

উপসাগরীয় অঞ্চলের বন্ধুদের আর রক্ষা করবে না বা পারবে না যুক্তরাষ্ট্র

Email :241

কাতারে হামলার পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। তবুও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলার নির্দেশ দেন।

কাতারে একটি আবাসিক ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। ছবি: এএফপি

এই বছরের মে-তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারের রাজধানী দোহায় বিমানবন্দরের একটি হ্যাঙ্গারে দাঁড়িয়ে দেশটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তার পেছনে ছিল একদল মার্কিন সেনা। তার বাম পাশে একটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন আর ডান পাশে একটি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান। সামরিক শক্তির এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে ট্রাম্প তার মিত্রদের উদ্দেশ্যে হয়ত বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। 

সেদিন তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কিংবা আমাদের সঙ্গীদের রক্ষা করার প্রয়োজন হলে আমি কখনোই আমেরিকান শক্তি প্রয়োগে দ্বিধা করব না। আর এ দেশটি আমাদের মহান মিত্রদের মধ্যে অন্যতম।’

কিন্তু ৯ সেপ্টেম্বর, আমেরিকার আরেক মিত্র দেশই তার সেই ‘মহান মিত্র দেশ’ কাতারের ওপর হামলা চালায় এবং সেখানে ব্যবহার করা হয় মার্কিন যুদ্ধ বিমান। সেদিন ইসরায়েলের বিমানবাহিনী দোহায় একটি আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায়। ভবনটিতে হামাসে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল। তবে হামাসের দাবি, ইসরায়েলের এ হামলা ব্যর্থ হয়েছে। ঘটনায় হামাসের নিম্নপদস্থ পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেলেও, ঘটনার পর থেকে ওই শীর্ষ নেতাদের দেখা যায়নি।

এটি শুধু একটি সামরিক ব্যর্থতাই নয়। এই হামলা গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে দিতে পারে। একইসঙ্গে উপসাগরীয় অঞ্চলের অনেক প্রভাবশালী নেতা যা আশঙ্কা করছিলেন তা-ই আরও জোরদার হলো। তারা আশঙ্কা করছিলেন, এখন ইসরায়েল হয়ে উঠবে আঞ্চলিক প্রভাবশালী শক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্র আর তাদের নিরাপত্তা দিকে পারবে না।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যখন প্রায় ১,৪০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে বা অপহরণ করে, তখন থেকে ইসরায়েল সরকার প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা হামাসের নেতাদের খুঁজে বের করবে। তবে এতদিন তারা কাতারে হামলা চালানো থেকে বিরত ছিল। ছোট্ট এই উপসাগরীয় রাষ্ট্রেই রয়েছে হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয় এবং একইসঙ্গে আমেরিকার সেন্ট্রাল কমান্ডের আঞ্চলিক সদর দপ্তর।

কাতারে হামলার পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিল মোসাদ (ইসরায়েলের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা) এবং দেশটির সেনা কর্মকর্তারা। তাদের যুক্তি ছিল, এতে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি আলোচনার উদ্যোগ ব্যাহত হবে এবং গাজায় এখনো জিম্মি থাকা লোকজনের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। তবুও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই হামলার নির্দেশ দেন। তার কারণ হিসেবে আংশিকভাবে ৮ সেপ্টেম্বর জেরুজালেমে এক বন্দুক হামলায় ছয়জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ঘটনাকে দায়ী করা হয়। ওই ঘটনায় নেতানিয়াহুর সরকার কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে।

এ ঘটনার মধ্য দিয়ে কাতার হলো ষষ্ঠ দেশ যে ৭ অক্টোবর হত্যাযজ্ঞের পর ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে। যদিও ইসরায়েল দাবি করতে পারে, প্রকৃত হুমকির কারণেই তারা সেখানে হামলা চালিয়েছে। হামলার শিকার হওয়া অন্যরা হলো—ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও ইয়েমেন। তাছাড়া আঞ্চলিক বিভিন্ন গোষ্ঠিকে সহায়তা দানকারী ইরানেও ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। কাতারের ক্ষেত্রে এমন কোনো দাবির সুযোগ নেই। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts