
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৪২ হাজার ৬৬৫ জন কর্মী বিদেশে গেছেন, যা এখন পর্যন্ত এক মাসে সর্বোচ্চ বৈদেশিক কর্মসংস্থান।
এই সংখ্যা চলতি বছরের জুলাই মাসের তুলনায় ২৪১ শতাংশ ও ২০২৪ সালের আগস্টের তুলনায় ১৬৯ শতাংশ বেশি। বিদেশে কর্মীগমনে এই নাটকীয় বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ সৌদি আরব—আগস্টে দেশটি একাই ৯৯ হাজার ৩৮১ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অভ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) সূত্র জানিয়েছে, সৌদি দূতাবাস বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য, বিশেষ করে স্বল্প-দক্ষ লোডিং-আনলোডিং খাতে, বাধ্যতামূলক দক্ষতা সনদ সাময়িকভাবে স্থগিত করার পর এই উল্লম্ফন দেখা যায়, যা বড় স্বস্তি এনেছে।
সৌদি ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম (এসভিপি) চালুর কারণে জুলাইয়ে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা ৪১ হাজার ৭৯৭ জনে নেমে এসেছিল। এই প্রোগ্রামের আওতায় স্বল্প-দক্ষ চাকরির জন্য দক্ষতা সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
তবে বায়রার অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো সতর্ক করেছে, এই গতি হয়তো বেশিদিন থাকবে না। স্বল্প-দক্ষ কর্মীদের জন্য এসভিপি (‘তাকামুল’ নামেও পরিচিত) চলতি মাসে ফের চালু করা হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
এছাড়াও রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের সিঙ্গেল-এন্ট্রি ভিসার জন্য বাধ্যতামূলক সত্যায়ন পুনরায় চালু করার কারণে ভিসা প্রক্রিয়াকরণে বিলম্ব হচ্ছে। এতে ফলে হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ে রয়েছে।
বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে “তাকামুল” নামক একটি নতুন শর্ত বা সিস্টেম যুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত কাগজপত্র ও সার্টিফিকেশন প্রয়োজন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্লিনিং, লোডিং-আনলোডিংয়ের মতো কাজের জন্যও এখন প্রশিক্ষণ ও কম্পিউটারভিত্তিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট দরকার—যেটা আমাদের দেশের শ্রমিকরা সাধারণত জানেন না, শিখেন না এবং শেখানোও হয় না। ফলে এই সার্টিফিকেট পেতে তারা সমস্যায় পড়ছেন। এ কারণে বিভিন্ন সেন্টারে যেতে হচ্ছে, যেখানে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে না বা সময় লাগছে অনেক।’
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ক্ষেত্রেও সার্টিফিকেট চাওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব ক্যাটাগরিতে অবশ্য সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক নয়। যেমন, রোড ক্লিনার বা হাউস ক্লিনারের জন্য লাগছে না, কিন্তু অন্য পদের জন্য লাগছে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘গত মাসে লোডিং-আনলোডিং কাজের জন্য সৌদি দূতাবাস ছাড় দিয়েছিল। ফলে ভিসার হার বেড়ে যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশ দূতাবাসও বর্তমানে সত্যায়ন ছাড়া জব ডিমান্ড লেটার ইস্যু করছে। এসব মিলিয়ে গত মাসে পুরনো ব্যাকলগে পড়ে থাকা অনেকে ভিসা পেয়েছেন।’





